জয়নুল উৎসব ২০২৪ উপলক্ষ্যে আয়োজিত প্রদর্শনী, লোক ও কারুশিল্পীদের মেলা, জয়নুল স্মারক বক্তৃতা ও জয়নুল সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানের

জয়নুল উৎসব ২০২৪ উপলক্ষ্যে আয়োজিত প্রদর্শনী, লোক ও কারুশিল্পীদের মেলা, জয়নুল স্মারক বক্তৃতা ও জয়নুল সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানের

  • Uncategorized
  • Comments Off on জয়নুল উৎসব ২০২৪ উপলক্ষ্যে আয়োজিত প্রদর্শনী, লোক ও কারুশিল্পীদের মেলা, জয়নুল স্মারক বক্তৃতা ও জয়নুল সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানের

জয়নুল উৎসব-২০২৪

চারুকলা অনুষদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলার পথিকৃৎ চারুকলার প্রতিষ্ঠাতা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১১০তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে জয়নুল উৎসব ২০২৪ আয়োজনের লক্ষ্যে গত ১৮ নভেম্বর ২০২৪ অনুষদের চেয়ারম্যানবৃন্দের সভার মাধ্যমে সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দের সমন্বয়ে ০৮টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। উপ-কমিটি সমূহ উক্ত আয়োজন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য ১৯ নভেম্বর ২০২৪ থেকেই কার্যক্রম শুরু করে । পর্যায়ক্রমে উপ-কমিটিগুলো আলাদা আলাদাভাবে সভা আহ্বানের মাধ্যমে চুড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

চারুকলা অনুষদের উত্তর পাশের গেট সংলগ্ন ভিতরে প্রবেশ রাস্তার দেয়ালে বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশের আর্থিক সহায়তায় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ছবির রেপ্লিকা অঙ্কন ও তাঁর উদ্ধৃতি লেখা হয়। এ কাজে অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সহযোগিতা করেন। এছাড়া সাঁওতাল সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব রীতিতে যে আলপনা অঙ্কন করে থাকে ঠিক সেই ঢং-এ অনুষদের প্রাঙ্গণের পশ্চিম প্রান্তে পরিত্যক্ত দেবালয় ভবনের দেয়ালে আলপনা অঙ্কন করা হয়। একই সাথে মৃৎশিল্প বিভাগের একটি ক্লাসরুমে সাদা কালোয় এবং চুল্লি ঘরে দেয়ালে সাওতালদের ঐতিহ্যবাহী দেয়াল চিত্র তুলে ধরা হয়। অনুষদের সম্মানিত শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী ও অন্যান্যদের রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ২৬-১২-২০২৪ তারিখ আয়োজনের প্রস্তুতি সফলভাবে সম্পন্ন হয়।

২৭-১২-২০২৪ তারিখ সকাল ১০.০০ মিনিটে মেলা উদ্বোধন করা হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত লোক ও কারুশিল্পীদের শিল্পকর্ম নিয়ে (৩২টি স্টলে) মেলা আয়োজন করা হয়। এই লোক ও কারুশিল্পীরা হচ্ছে এমন নৈপুন্য কর্মী বা কারিগর যারা আংশিক বা সম্পূর্নভাবে হাত দিয়ে তাদের শিল্পকর্ম তৈরি করেন। এছাড়া অনুষদের ০৮টি বিভাগের শিল্পী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তৈরী শিল্পকর্ম বিভাগীয় স্টলগুলোতে প্রদর্শন করা হয়। ঢাকা এবং তার আশে পাশের শহর থেকে লোক ও কারুপণ্যের প্রতি যাদের ভালবাসা রয়েছে তারা এইসব স্টলে এসে তাদের পছন্দের শিল্পকর্মটি কিনে নেয়। মেলা আয়োজনের তিনদিনই ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ব্যাপক সমাগম ঘটে।

অনুষদের জয়নুল গ্যালারীতে শিক্ষকবৃন্দের শিল্পকর্ম নিয়ে আয়োজিত প্রদর্শনী উদ্বোধন করা হয় ঐদিন সকাল ১০.৩০ মিনিটে। মেলা ও শিল্পকর্ম প্রদর্শনী একই দিনে উদ্বোধন করেন অধ্যাপক এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পিএইচডি, কোষাধ্যক্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইমেরিটাস অধ্যাপক শিল্পী মু. আবুল হাশেম খান, অধ্যাপক শিল্পী ড. আব্দুস সাত্তার, জনাব সাইফুদ্দীন আহমদ, প্রক্টর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশলী ময়নুল আবেদিন, জনাব মো. মহসিন হাবিব চৌধুরী, সিওও এবং পরিচালক, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, কাজী মাহবুবুল আলম, পরিচালক, লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, বিপ্লব সাহা, কর্ণধার, বিশ্বরঙ

২৮-১২-২০২৪ বিকেল ৩.৩০ মিনিটে অনুষদের ওসমান জামাল মিলনায়তনে জয়নুল উৎসব উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয় স্মারক বক্তৃতা। স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের বক্তা ছিলেন অধ্যাপক শিল্পী ড. আব্দুস সাত্তার। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোস্তফা জামান খান এবং সভাপত্বি করেন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ আজহারুল ইসলাম শেখ।

২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ শিল্পাচার্য জন্মদিন উপলক্ষ্যে সকাল ৯.০০ মিনিটে চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে শিল্পাচার্য পরিবারের পাশাপাশি প্রতি বিভাগের শিল্পী শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী ও আগত অতিথিবৃন্দ শিল্পাচার্যের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সকাল ৯.৩০ মিনিটে আগত সবাই অনুষদ কর্তৃক আয়োজিত প্রাতঃরাশে অংশগ্রহণ করেন।

সকাল ১০.৩০ মিনিটে অনুষদের বকুল তলায় অনুষ্ঠিত হয় উৎসবের সবচেয়ে বড় আর্কষন ‘জয়নুল সম্মাননা’ প্রদান অনুষ্ঠান। প্রতি বছর চারুকলা বিষয়ক শিল্পশিক্ষা বিকাশে ও চর্চায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ দেশের দু’জন শিল্প শিক্ষাবিদকে “জয়নুল সম্মাননা” প্রদান করা হয়। এ বছর চারুকলা অনুষদের শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক ও শিল্পী অধ্যাপক ড. রফিকুল আলম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক ও শিল্পী অধ্যাপক মিজানুর রহিম কে ‘জয়নুল সম্মাননা-২০২৪’ প্রদান করা হয়।

সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান, পিএইচডি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, মাননীয় প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন), অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, মাননীয় প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) এবং শিল্পাচার্যের সুযোগ্য পুত্র প্রকৌশলী মইনুল আবেদিন। অনুষ্ঠানের সভাপত্বি করেন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ আজহারুল ইসলাম শেখ।

বিকেল ৩.৩০ মিনিটে চারুকলা অনুষদের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রচুর শিল্পপ্রেমী দর্শকদের সমাগম ঘটে।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১১০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত উপরোক্ত অনুষ্ঠানমালা সুষ্ঠু ও সুন্দর এবং সফলভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে যাদের সহৃদয় উপস্থিতি, মূল্যবান পরামর্শ ও মতামত প্রদান এবং বুদ্ধিবৃত্তিক পরিশ্রম ও আন্তরিক সহযোগিতা রয়েছে তাদেরকে অনুষদ কর্তৃপক্ষ সকলকে জানায় আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।